বিশ্বাসীদের পিতা আব্রাহাম

চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

দ্বাদশ অধ্যায়

বিশ্বাসীদের পিতা আব্রাহাম

পবিত্র বাইবেলে অনেক আদর্শ ব্যক্তি আছেন। তাঁরা আমাদের জীবনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারেন। আব্রাহাম (অব্রাহাম) হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যাকে আমরা বলি বিশ্বাসীদের পিতা। তিনি ঈশ্বরের ওপর এত গভীর বিশ্বাস রেখেছিলেন যে, তাঁর বংশেই মুক্তিদাতার জন্ম হয়েছিল। তাঁর জীবনাদর্শ যদি আমরা অনুকরণ করতে পারি তবে আমরাও ঈশ্বরের আপনজন হতে পারি ।

আব্রাহামের আহ্বান

আব্রাহাম মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের উর্ দেশে বাস করতেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল সারা। আব্রাহাম ছিলেন একজন পশুপালক। তাঁর ছিল অনেক ভেড়া, গরু, ছাগল,উট ইত্যাদি পশু। তিনি সারা দিন পশুপালনের জন্য মাঠেই থাকতেন। আব্রাহাম একজন খুবই ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। ঈশ্বর তাঁকে আরও বড় একটা দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন। তাঁর বিশ্বাস ও ভক্তি ঈশ্বর যাচাই করতে চাইলেন। তাই ঈশ্বর একদিন আব্রাহামকে বললেন, “তুমি তোমার দেশ, তোমার আত্মীয়-স্বজন, তোমার পৈতৃক ভিটামাটি ও সমস্ত কিছু ছেড়ে, যে দেশ আমি তোমাকে 

দেখাব, সেই দেশেই চলে যাও। সেখানে তোমা থেকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনে আব্রাহাম ও পুত্র ইসায়াক আমি একটি মহান জাতির উদ্ভব ঘটাব। আমি তোমাকে আশিসধন্য করব। তোমার নাম মহৎ করে তুলব। তুমি নিজেই হবে জীবন্ত আশীর্বাদ। যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে, আমি তাদের আশীর্বাদ করব। কেউ তোমাকে অভিশাপ দিলে, আমি তাকে অভিশাপnদিব। এই পৃথিবীর সকল জাতির মানুষেরা তোমার নাম নিয়েই একে অন্যকে আশীর্বাদ জানাবে” (আদি ১২:১-৩)।

এই আহ্বান আব্রাহামের জন্য ছিল বড় এক সিদ্ধান্তের সময়। তিনি সবকিছু বিবেচনা করে ঈশ্বরের এই আহ্বানে সাড়া দিলেন। এরপর তিনি অচেনা ও অজানা এক নতুন দেশের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। যেতে যেতে তিনি সিখেম নামে এক জায়গায় এসে উপস্থিত হলেন। সেখানে ওক্ গাছের নিচে ঈশ্বর তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, “আমি এই দেশ তোমার বংশকে দেব।” তখন আব্রাহাম সেখানে প্রভুর উদ্দেশ্যে একটি যজ্ঞবেদী তৈরি করে ঈশ্বরের নামে বলি উৎসর্গ করলেন।

ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি

আব্রাহাম ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত দেশে এসে পৌঁছালেন। সেখানে তিনি তাঁবু খাটিয়ে বাস করতে লাগলেন। কিন্তু তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। একদিন ঈশ্বর তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন, “ভয় কোরো না, আমি তোমাকে মহামূল্যবান পুরস্কারে ভূষিত করব।” আব্রাহাম ঈশ্বরকে বললেন, “তুমি আমাকে কী দেবে? আমার তো কোনো ছেলেমেয়ে নেই । কে আমার উত্তরাধিকারী হবে? তখন প্রভু তাঁকে বললেন, “তোমারই সন্তান তোমার উত্তরাধিকারী হবে।” এভাবে প্রভু ঈশ্বর তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, “আমি তোমাকে বহুজাতির পিতা করে তুলব। তোমার বংশ হবে আকাশের তারা-নক্ষত্র এবং সমুদ্রের বালুকণার মতো। আমি তোমাকে ফলশালী করে তুলব। তোমা থেকে অনেক রাজা বেরিয়ে আসবে। আমার ও তোমার মধ্যে এবং পুরুষানুক্রমেই তোমার ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে আমার এই সন্ধি চিরন্তন সন্ধি রূপেই স্থাপন করব। যেন আমি তোমার ও তোমার ভবিষ্যৎ বংশধরদের ঈশ্বর হই।”

ইসায়াককে বলিদানে প্রস্তুত পিতা আব্রাহাম

ঈশ্বর সব সময় তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন। আব্রাহামের কাছে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাঁর স্ত্রী সারা একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেবেন। ঈশ্বর তাঁর সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন। তাই বৃদ্ধ বয়সেও সারা গর্ভধারণ করে একটি পুত্রের জন্ম দিলেন। আব্রাহাম তাঁর নাম রাখলেন ইসায়াক ।

ঈশ্বর জানতেন যে তাঁর প্রতি আব্রাহামের গভীর বিশ্বাস ও আস্থা আছে। তবুও তিনি আব্রাহামকে যাচাই করার জন্য একদিন তাঁকে বললেন, “তোমার একমাত্র সন্তান ইসায়াককে, যাকে তুমি অনেক বেশি ভালোবাস, তাকে আমার উদ্দেশ্যে বলিদান কর।”

ঈশ্বরের কথামতো তিনি ইসায়াককে নিয়ে মোরিয়া দেশে গেলেন। সঙ্গে নিলেন দুইজন কাজের লোক। বলিদানের জন্য নিলেন কাঠ, আগুন এবং খড়গ। এরপর তারা দুইজনে প্রার্থনা করে নির্দিষ্ট জায়গার উদ্দেশে রওনা দিলেন।

যাত্রাপথে ইসায়াক তাঁর বাবাকে বললেন, ‘বাবা! আগুন ও কাঠ তো আমরা নিয়েছি কিন্তু বলিদানের মেষ কোথায়?” আব্রাহাম তাঁকে বললেন, ‘ঈশ্বরই জোগাড় করে দেবেন।' নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে আব্রাহাম বলিদানের জন্য যজ্ঞবেদী সাজালেন। এরপর ইসায়াককে বেঁধে বেদীতে কাঠের উপরে শোয়ালেন। এভাবে আব্রাহাম ইসায়াককে বলিদানে প্রস্তুত করলেন এবং নিজের ছেলেকে বলি দেওয়ার জন্য খড়গ হাতে তুলে নিলেন। ঠিক এই সময় স্বর্গ থেকে প্রভুর দূত তাকে বললেন, ছেলেটির গায়ে তুমি হাত দিও না। ওর কোনো ক্ষতি কোরো না। কেননা আমি জানি তুমি তোমার ঈশ্বরকে নিজের একমাত্র ছেলের চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাস।

বিশ্বাসীদের পিতা আব্রাহাম আমরা পূর্বেই জেনেছি যে আব্রাহাম মেসোপটেমিয়ার উর্ দেশে বাস করতেন। ঐ সময়ে মেসোপটেমিয়ার লোকজন বহু দেব-দেবীর (যেমন, সূর্য, চন্দ্র, তারা, নক্ষত্র) পূজা ও আরা- ধনা করত। এক ঈশ্বরকে তারা জানত না। কিন্তু আব্রাহাম সর্বশক্তিমান এক ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিলেন। ঈশ্বরের ওপর আব্রাহামের বিশ্বাস এত দৃঢ় ছিল যে, তিনি ঈশ্বরের কথানুসারে নিজের পৈতৃক ভিটাবাড়ি, ধনসম্পদ, আত্মীয়-পরিজন সব কিছুরই মায়া ত্যাগ করলেন। ঈশ্বরের ওপর গভীর বিশ্বাস রেখে তিনি অচেনা-অজানা নতুন এক দেশে চলে এলেন। এমন কি তিনি নিজের একমাত্র ছেলে ইসায়াককেও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলিদান করতে প্রস্তুত ছিলেন। এভাবে আব্রাহামই সর্বপ্রথম এক ঈশ্বরের ওপর গভীর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করলেন। তিনি আমাদের সামনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন। তাই আমরা আব্রাহামকে বিশ্বাসীদের পিতা বলে ডাকি।

কী শিখলাম

ঈশ্বরের ওপর আব্রাহামের বিশ্বাস ছিল গভীর। একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া তিনি অন্য কোনো দেব-দেবীর পূজা ও আরাধনা করতেন না। তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনে সদা প্রস্তুত ছিলেন। ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে ভালোবাসার সন্ধি স্থাপন করেছেন ।

গান: প্ৰভু যদি ডাকো মোরে, পণ করেছি ফিরবো না। আমার দেশে তোমার আলো নিভতে আমি দিবোনা। পণ করেছি ফিরব না ।

ঈশ্বরের ডাকে আব্রাহামের সাড়াদানের ঘটনাটি অভিনয়ের মাধ্যমে দেখাও ।

অনুশীলনী

১। শূন্যস্থান পূরণ কর

(ক) আব্রাহাম-----------ইচ্ছা পালনে সদা প্রস্তুত ছিলেন।

(খ) আব্রাহাম ছিলেন একজন ---ব্যক্তি। 

(গ) স্বর্গ থেকে প্রভুর দূত তাঁকে বললেন, -----------গায়ে তুমি হাত দিও না ।

(ঘ) ঈশ্বর সবসময় তার--------------পূরণ করেন।

(ঙ) ঈশ্বরের উপর আব্রাহামের বিশ্বাস ছিল--------------

 

৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দাও

৩.১ আব্রাহামকে কার পিতা বলা হয়?

(ক) জনগণের (খ) ইসায়াকের

(গ) বিশ্বাসীদের (ঘ) অবিশ্বাসীদের

৩.২ আব্রাহাম কাকে বিশ্বাস করতেন?

(ক) প্ৰকৃতিকে (খ) এক ঈশ্বরে (গ) দেবদেবীকে (ঘ) অনেক ঈশ্বরে

৩.৩ আব্রাহাম কোন দেশে বাস করতেন?

(ক) মিশর

(খ) কানান

(গ) ঊর

(ঘ) মেসোপটেমিয়া

৩.৪ কে বৃদ্ধ বয়সে একপুত্রের জন্ম দিলেন ?

(ক) রুথ

(খ) সারা

(গ) মারীয়া

(ঘ) এসথের

৩.৫ আব্রাহাম কাকে বলি দিতে প্রস্তুত ছিলেন?

(ক) যাকোব

(খ) যোসেফ

(গ) বেঞ্জামিন

(ঘ) ইসায়াক

৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) আব্রাহামকে কেন বিশ্বাসীদের পিতা বলা হয়? 

(খ) আব্রাহাম কেন নিজের দেশ ছেড়ে নতুন দেশের উদ্দেশে রওনা দিলেন?

(গ) আব্রাহামের জীবনে বিশ্বাসের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা কী ছিল?

৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

ক) আব্রাহামের কাছে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি কী ছিল? 

খ) ঈশ্বর আব্রাহামকে কীভাবে আহ্বান করলেন?

Content added By
Promotion